কাঁচা রসুন খাওয়ার উপকারিতা কি
কাঁচা রসুন খাওয়ার উপকারিতা কি
রসুন আমাদের দৈনন্দিন খাবারের একটি গুরুত্বপূর্ণ উপাদান। তরকারি সুস্বাদু করার জন্য অন্যান্য পেঁয়াজ, মরিচের সাথে রসুন ও ব্যবহার করা হয়। রসুন সাধারণত মশলা হিসেবে ব্যবহার হলেও প্রাচীনকাল থেকে রসুন ওষুধ হিসেবে ব্যবহার হয়ে আসছে। শুধু খাবারের স্বাদ বাড়াতেই নয়, ঔষধি গুণের জন্য রসুনের কদর চিরকাল। কাঁচা রসুন খাওয়া অভ্যাস করতে পারলে এড়ানো যায় অসংখ্য রোগভোগ। তবে জেনে রাখতে হবে তার সঠিক প্রয়োগ।
রসুন আমাদের দৈনন্দিন খাবারের একটি গুরুত্বপূর্ণ উপাদান। এই রসুনে রয়েছে থিয়ামিন (ভিটামিন বি১), রিবোফ্লাবিন (ভিটামিন বি২), নায়াসিন (ভিটামিন বি৩), প্যান্টোথেনিক অ্যাসিড (ভিটামিন বি৫), ভিটামিন বি৬, ফোলেট (ভিটামিন বি৯) ও সেলেনিয়াম। সেলেনিয়াম ক্যানসার প্রতিরোধে দারুণ কাজ করে। রসুনের মধ্যে রয়েছে এলিসিন নামে এক জরুরি ও গুরুত্বপূর্ণ উপাদান, যা ক্যানসারসহ বিভিন্ন শারীরিক সমস্যা দূর করতে কার্যকর।
এই এলিসিন নামে যে কম্পাউন্ড রসুনে পাওয়া যায়, তার কারণে রসুনকে সুপারফুডে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে।প্রাচীন ইতিহাস ঘেঁটে দেখলে জানতে পারবেন, তখন রসুন কিন্তু শুধু বিভিন্ন অসুখ সারানোর জন্যই ব্যবহার হতো। মিসরীয়, ব্যাবিলনীয়, গ্রিক, রোমান ও চৈনিক সভ্যতায় ওষুধ হিসেবে রসুন ব্যবহারের নিদর্শন পাওয়া গেছে। রসুন কাঁচা খেলে সবচেয়ে বেশি উপকার পাওয়া যায়।
আরো পড়ুন: লিভারের জন্য উপকারী খাবার
আসলে উনুনে বা আভেনে চাপালে রসুনের কোয়া বাটার পর যে রাসায়নিক বিক্রিয়া ঘটে তাতে, তাতে অ্যালিসিন সহজে হজম হতে সুবিধা হয়। মনে রাখতে হবে, সবচেয়ে বেশি ফল মিলবে যদি খালি পেটে কাঁচা রসুন খাওয়া যায়। রসুন কাজে লাগিয়ে তৈরি করা যায় বিভিন্ন রোগের টোটকা। এক নজরে দেখে নেওয়া যাক অব্যর্থ দাওয়াইয়ের কিছু উপকরণ প্রণালী।
কাঁচা রসুন খাওয়ার উপকারিতা:
১. রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি:
কাঁচা রসুনে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট, অ্যান্টি-ফাঙ্গাল এবং অ্যান্টি-ব্যাকটেরিয়াল উপাদান থাকে যা শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি কাঁচা রসুন রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে:
কারণ:
অ্যালিসিন: কাঁচা রসুনে অ্যালিসিন নামক একটি যৌগ থাকে যা শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধিতে সাহায্য করে। অ্যালিসিনে অ্যান্টি-ব্যাকটেরিয়াল, অ্যান্টি-ফাঙ্গাল এবং অ্যান্টি-ভাইরাল বৈশিষ্ট্য রয়েছে যা জীবাণু, ছত্রাক এবং ভাইরাসের বিরুদ্ধে লড়াই করতে সাহায্য করে।
অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট: কাঁচা রসুনে প্রচুর পরিমাণে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট থাকে যা শরীরের কোষগুলিকে ক্ষতির হাত থেকে রক্ষা করে।
ভিটামিন এবং খনিজ: কাঁচা রসুন ভিটামিন সি, ভিটামিন B6, সেলেনিয়াম এবং ম্যাঙ্গানিজের একটি ভালো উৎস। এই পুষ্টি উপাদানগুলি রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।
কাঁচা রসুন খাওয়ার উপকারিতা:
সর্দি-কাশি প্রতিরোধে সাহায্য করে
জ্বর কমাতে সাহায্য করে
শরীরের সংক্রমণ প্রতিরোধে সাহায্য করে
ক্যান্সার প্রতিরোধে সাহায্য করতে পারে
হৃদরোগের ঝুঁকি কমাতে সাহায্য করতে পারে
রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করতে পারে
রক্তে শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করতে পারে
কাঁচা রসুন খাওয়ার উপায়:
খালি পেটে এক কোয়া কাঁচা রসুন চিবিয়ে খেতে পারেন
সালাদে কাঁচা রসুন কুচি মিশিয়ে খেতে পারেন
স্যুপ, তরকারি বা অন্যান্য খাবারে কাঁচা রসুন কুচি মিশিয়ে রান্না করতে পারেন
সতর্কতা:
অতিরিক্ত কাঁচা রসুন খাওয়ার ফলে পেট খারাপ, বমি বমি ভাব, গ্যাস, এবং ডায়রিয়ার মতো সমস্যা হতে পারে।
গর্ভবতী বা স্তন্যদানকারী মায়েদের কাঁচা রসুন খাওয়ার আগে ডাক্তারের সাথে পরামর্শ করা উচিত।
২. হৃৎপিণ্ডের সুরক্ষা:
রসুন রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে, 'খারাপ' কোলেস্টেরল (LDL) কমায় এবং 'ভালো' কোলেস্টেরল (HDL) বাড়ায়। এটি হৃদরোগের ঝুঁকি কমাতে সাহায্য করে।
কাঁচা রসুন হৃৎপিণ্ডের সুরক্ষায় কি ভূমিকা রাখে?
কাঁচা রসুন হৃৎপিণ্ডের সুরক্ষায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। এর কিছু কারণ নীচে উল্লেখ করা হল:
রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে: কাঁচা রসুন রক্তচাপ কমাতে সাহায্য করে। এতে থাকা অ্যালিসিন নামক যৌগ রক্তনালীকে প্রসারিত করে রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে রাখে।
কোলেস্টেরলের মাত্রা নিয়ন্ত্রণে: কাঁচা রসুন খারাপ কোলেস্টেরল (LDL) এর মাত্রা কমাতে এবং ভালো কোলেস্টেরল (HDL) এর মাত্রা বাড়াতে সাহায্য করে। এটি রক্তনালীতে কোলেস্টেরল জমা হওয়া রোধ করে হৃদরোগের ঝুঁকি কমায়।
রক্ত জমাট বাঁধা রোধে: কাঁচা রসুন রক্ত জমাট বাঁধা রোধ করে। এটি প্লেটলেটগুলিকে একত্রিত হতে বাধা দেয়, যা হার্ট অ্যাটাক এবং স্ট্রোকের ঝুঁকি কমায়।
রক্তনালী পরিষ্কার: কাঁচা রসুন রক্তনালীতে জমা অপशिष्ट পদার্থ পরিষ্কার করতে সাহায্য করে। এটি রক্ত প্রবাহ উন্নত করে এবং হৃৎপিণ্ডের কার্যকারিতা বৃদ্ধি করে।
অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট: কাঁচা রসুন অ্যান্টিঅক্সিডেন্টে ভরপুর। এগুলি হৃৎপিণ্ডের কোষগুলিকে ক্ষতির হাত থেকে রক্ষা করে।
প্রদাহ কমাতে: কাঁচা রসুন প্রদাহ কমাতে সাহায্য করে। প্রদাহ হৃদরোগের একটি প্রধান ঝুঁকির কারণ।
কাঁচা রসুন খাওয়ার উপায়:
কাঁচা রসুন স্যালাড, স্যুপ, এবং करीতে ব্যবহার করা যেতে পারে।
রসুনের তেল তৈরি করে তা রান্নার সময় ব্যবহার করা যেতে পারে।
রসুনের কুঁড়ি চিবিয়ে খাওয়া যেতে পারে।
দ্রষ্টব্য:
অতিরিক্ত রসুন খাওয়া পেট খারাপ, বমি বমি ভাব এবং ডায়রিয়ার কারণ হতে পারে।
যদি আপনার কোনও ঔষধের প্রতিক্রিয়া থাকে, তাহলে রসুন খাওয়ার আগে আপনার ডাক্তারের সাথে কথা বলুন।
৩. রক্তে শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণ:
কাঁচা রসুন রক্তে শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে, যা ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য উপকারী। কাঁচা রসুন রক্তে শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণে:
গবেষণা:
কিছু গবেষণায় দেখা গেছে যে কাঁচা রসুন রক্তে শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করতে পারে।
২০০৬ সালের একটি গবেষণায় দেখা গেছে যে কাঁচা রসুন রক্তে শর্করার মাত্রা কমাতে সাহায্য করে এবং এথেরোস্ক্লেরোসিসের ঝুঁকি কমাতে পারে।
২০১৪ সালের গবেষণা অনুসারে নিয়মিত রসুন খাওয়া রক্তে শর্করার মাত্রা কমাতে সাহায্য করতে পারে।
কার্যপ্রণালী:
রসুনে 'অ্যালিসিন' নামক একটি যৌগ থাকে যা রক্তে শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে।
অ্যালিসিন ইনসুলিনের কার্যকারিতা বৃদ্ধি করে এবং গ্লুকোজের বিপাক উন্নত করে।
রসুন ভিটামিন B6 এবং C-এরও ভালো উৎস। ভিটামিন B6 কার্বোহাইড্রেট বিপাকের সাথে জড়িত। ভিটামিন C রক্তে শর্করার মাত্রা বজায় রাখতেও ভূমিকা রাখতে পারে।
কিভাবে খাবেন:
কাঁচা রসুন খেতে পারেন।
তরকারিতে রসুন দিয়ে রান্না করাটাও ভালো।
রসুনের তেল বা রসুনের ক্যাপসুলও ব্যবহার করতে পারেন।
সতর্কতা:
অতিরিক্ত রসুন খেলে পেট খারাপ, বমি বমি ভাব, মাথাব্যথা, ও দুর্বলতা হতে পারে।
গর্ভবতী ও স্তন্যদানকারী মায়েদের রসুন খাওয়ার আগে ডাক্তারের সাথে পরামর্শ করা উচিত।
যারা রক্ত পাতলা করার ওষুধ খান তাদেরও রসুন খাওয়ার আগে ডাক্তারের সাথে পরামর্শ করা উচিত।
৪. ক্যান্সার প্রতিরোধ:
রসুনে থাকা অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট ক্যান্সার কোষের বৃদ্ধি রোধে সাহায্য করতে পারে। কাঁচা রসুন ক্যান্সার প্রতিরোধে সহায়ক হতে পারে:
কারণ:
অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট সমৃদ্ধ: কাঁচা রসুনে প্রচুর পরিমাণে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট থাকে যা ক্যান্সার কোষের বৃদ্ধি ও বিস্তার রোধে সাহায্য করে।
অ্যান্টি-কারসিনোজেনিক: রসুনে অ্যালিসিন নামক যৌগ থাকে যা ক্যান্সার কোষ ধ্বংসে সাহায্য করে।
রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি: রসুন রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে যা ক্যান্সারের বিরুদ্ধে লড়াই করতে সাহায্য করে।
কোষের ক্ষতি রোধ: রসুন কোষের ক্ষতি রোধ করে যা ক্যান্সারের ঝুঁকি কমাতে পারে।
কিছু গবেষণায় দেখা গেছে:
নিয়মিত রসুন খাওয়া পাকস্থলী, কোলন, স্তন, প্রোস্টেট ও ফুসফুসের ক্যান্সারের ঝুঁকি কমাতে পারে।
রসুন ক্যান্সার কোষের বৃদ্ধি ও বিস্তার ধীর করে দিতে পারে।
রসুন ক্যান্সার থেরাপির কার্যকারিতা বৃদ্ধি করতে পারে।
তবে মনে রাখা জরুরি:
রসুন ক্যান্সারের প্রতিষেধক নয়।
ক্যান্সার প্রতিরোধে রসুনের ভূমিকা সম্পর্কে আরও গবেষণার প্রয়োজন।
ক্যান্সারের চিকিৎসার বিকল্প হিসেবে রসুন ব্যবহার করা উচিত নয়।
কিভাবে খাবেন:
প্রতিদিন ১-২ কোয়া কাঁচা রসুন খাওয়া যেতে পারে।
রসুন চিবিয়ে খাওয়া বা খাবারের সাথে রান্না করে খাওয়া যেতে পারে।
রসুনের তেল বা নির্যাসও ব্যবহার করা যেতে পারে।
সতর্কতা:
অতিরিক্ত রসুন খাওয়া পেট খারাপ, বমি বমি ভাব, মাথাব্যথা ইত্যাদি সমস্যা সৃষ্টি করতে পারে।
গর্ভবতী ও স্তন্যদানকারী মায়েদের রসুন খাওয়ার আগে চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া উচিত।
৫. ঠান্ডা ও সর্দি প্রতিরোধ:
কাঁচা রসুন ঠান্ডা ও সর্দি প্রতিরোধে সাহায্য করে। কাঁচা রসুন কি ঠান্ডা ও সর্দি প্রতিরোধে সাহায্য করে? কাঁচা রসুন ঠান্ডা ও সর্দি প্রতিরোধে সাহায্য করতে পারে।
কারণ:
অ্যান্টিব্যাকটেরিয়াল ও অ্যান্টিভাইরাল: রসুনে অ্যালিসিন নামক একটি যৌগ রয়েছে যা ব্যাকটেরিয়া ও ভাইরাসের বিরুদ্ধে লড়াই করতে সাহায্য করে।
রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি: রসুন ভিটামিন সি, সেলেনিয়াম এবং ম্যাঙ্গানিজের মতো খনিজগুলির একটি ভালো উৎস যা রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করতে সাহায্য করে।
শ্বাসযন্ত্রের প্রদাহ কমাতে সাহায্য করে: রসুনে অ্যান্টি-ইনফ্লেমেটরি বৈশিষ্ট্য রয়েছে যা শ্বাসযন্ত্রের প্রদাহ কমাতে সাহায্য করে।
কিভাবে কাঁচা রসুন ঠান্ডা ও সর্দি প্রতিরোধে ব্যবহার করা যায়:
কাঁচা রসুন খাওয়া: প্রতিদিন সকালে খালি পেটে ১-২ কোয়া কাঁচা রসুন চিবিয়ে খেতে পারেন।
রসুনের রস: ১-২ কোয়া রসুন পানিতে ভিজিয়ে রেখে সকালে খালি পেটে রসটি পান করতে পারেন।
রান্নায় রসুন ব্যবহার: রান্নায় নিয়মিত রসুন ব্যবহার করলে ঠান্ডা ও সর্দি প্রতিরোধে সাহায্য পাওয়া যাবে।
সতর্কতা:
অতিরিক্ত কাঁচা রসুন খেলে পেট খারাপ, বমি বমি ভাব, এবং মাথাব্যথার মতো সমস্যা হতে পারে।
গর্ভবতী বা স্তন্যদানকারী মায়েদের অতিরিক্ত রসুন খাওয়া উচিত নয়।
যদি আপনার কোনও ঔষধের প্রতি অ্যালার্জি থাকে, তাহলে রসুন খাওয়ার আগে ডাক্তারের সাথে পরামর্শ করুন।
মনে রাখবেন:
কাঁচা রসুন ঠান্ডা ও সর্দি প্রতিরোধে একটি কার্যকরী উপায় হতে পারে, তবে এটি একমাত্র সমাধান নয়।
স্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাস, নিয়মিত ব্যায়াম এবং পর্যাপ্ত ঘুম ঠান্ডা ও সর্দি প্রতিরোধে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।
৬. জীবাণুনাশক:
রসুনে থাকা অ্যালিসিন জীবাণুনাশক হিসেবে কাজ করে। কাঁচা রসুন জীবাণুনাশক। এতে অ্যালিসিন নামক একটি যৌগ রয়েছে যা ব্যাকটেরিয়া, ভাইরাস এবং ছত্রাকের বিরুদ্ধে লড়াই করতে সাহায্য করে।
কিছু উদাহরণ:
সর্দি-কাশি প্রতিরোধে: কাঁচা রসুন খাওয়া সর্দি-কাশি প্রতিরোধে সাহায্য করতে পারে। এটি ঠান্ডা লাগা এবং ফ্লু এর ঝুঁকি কমাতে পারে।
খাদ্য বিষক্রিয়া প্রতিরোধে: কাঁচা রসুন খাওয়া খাদ্য বিষক্রিয়া প্রতিরোধে সাহায্য করতে পারে। এটি E. coli এবং Salmonella এর মতো ক্ষতিকর ব্যাকটেরিয়ার বিরুদ্ধে লড়াই করতে পারে।
ঘা সারাতে: কাঁচা রসুনের রস ঘায়ের সংক্রমণ প্রতিরোধে এবং দ্রুত নিরাময় করতে সাহায্য করতে পারে।
কাঁচা রসুন ব্যবহারের কিছু উপায়:
কাঁচা রসুন খেতে পারেন: রসুন কুচি করে খাবারের সাথে মিশিয়ে খেতে পারেন অথবা সরাসরি খেতে পারেন।
রসুনের রস তৈরি করতে পারেন: রসুনের কোয়া পেস্ট করে পানি মিশিয়ে রস তৈরি করে খেতে পারেন।
রসুনের তেল তৈরি করতে পারেন: রসুনের তেল তৈরি করে তা ঘায়ের উপর লাগাতে পারেন।
সতর্কতা:
গর্ভবতী এবং স্তন্যদানকারী মায়েদের অতিরিক্ত পরিমাণে রসুন খাওয়া উচিত নয়।
৭. হজম উন্নত:
কাঁচা রসুন হজম উন্নত করতে সাহায্য করে। কাঁচা রসুন হজম উন্নত করতে সাহায্য করে।
কিভাবে কাঁচা রসুন হজম উন্নত করে:
অ্যান্টিব্যাকটেরিয়াল বৈশিষ্ট্য: কাঁচা রসুনে অ্যালিসিন নামক একটি যৌগ রয়েছে যা ব্যাকটেরিয়া, ভাইরাস এবং পরজীবী বিরুদ্ধে লড়াই করে যা হজম সমস্যার কারণ হতে পারে।
কাঁচা রসুন হজম উন্নত করতে কীভাবে ব্যবহার করবেন:
খালি পেটে: সকালে খালি পেটে এক কোয়া কাঁচা রসুন চিবিয়ে খেয়ে ফেলুন।
রান্নার সাথে: রান্নার সময় খাবারে কাঁচা রসুন কুচি ব্যবহার করুন।
রসুনের তেল: রসুনের তেল বানিয়ে তা স্যালাডে ব্যবহার করুন।
সতর্কতা:
অতিরিক্ত কাঁচা রসুন খেলে পেট খারাপ, বমি বমি ভাব, এবং ডায়রিয়া হতে পারে।
গর্ভবতী এবং স্তন্যদানকারী মহিলাদের কাঁচা রসুন খাওয়ার আগে ডাক্তারের সাথে পরামর্শ করা উচিত।
কাঁচা রসুন ছাড়াও হজম উন্নত করতে আরও কিছু উপায়:
প্রচুর পরিমাণে পানি পান করুন।
নিয়মিত ব্যায়াম করুন।
ফাইবার সমৃদ্ধ খাবার খান।
প্রক্রিয়াজাত খাবার, চিনি এবং অ্যালকোহল এড়িয়ে চলুন।
নিয়মিত সময়ে খাবার খান।
ধীরে ধীরে এবং ভালোভাবে চিবিয়ে খান।
৮. মস্তিষ্কের কার্যকারিতা বৃদ্ধি:
রসুন মস্তিষ্কের রক্ত সঞ্চালন উন্নত করতে সাহায্য করে এবং স্মৃতিশক্তি বৃদ্ধি করতে পারে। কাঁচা রসুন কি মস্তিষ্কের কার্যকারিতা বৃদ্ধি করে?
হ্যা কিছু গবেষণায় দেখা গেছে যে কাঁচা রসুন মস্তিষ্কের কার্যকারিতা বৃদ্ধিতে সাহায্য করতে পারে। তবে, এই গবেষণা গুলি প্রাথমিক পর্যায়ে রয়েছে এবং আরও গবেষণার প্রয়োজন।
কাঁচা রসুনের কিছু সম্ভাব্য সুবিধা:
স্মৃতিশক্তি বৃদ্ধি: কাঁচা রসুনে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট থাকে যা মস্তিষ্কের কোষগুলিকে ক্ষতি থেকে রক্ষা করতে পারে। এটি স্মৃতিশক্তি এবং শেখা বৃদ্ধিতে সাহায্য করতে পারে।
মস্তিষ্কের রক্ত প্রবাহ উন্নত করতে পারে: কাঁচা রসুন রক্ত নালীগুলিকে প্রশস্ত করতে সাহায্য করতে পারে, যা মস্তিষ্কে রক্ত প্রবাহ বৃদ্ধি করতে পারে। এটি মস্তিষ্কের কার্যকারিতা উন্নত করতে পারে।
আলঝেইমার রোগের বিরুদ্ধে লড়াই করতে পারে: কিছু গবেষণায় দেখা গেছে যে কাঁচা রসুন আলঝেইমার রোগের অগ্রগতি ধীর করতে সাহায্য করতে পারে।
কাঁচা রসুন খাওয়ার কিছু উপায়:
সালাদে যোগ করুন: কাঁচা রসুন কুঁচি করে সালাদে যোগ করুন।
ভাজিতে যোগ করুন: রান্নার সময় ভাজিতে কাঁচা রসুন যোগ করুন।
সস তৈরি করুন: কাঁচা রসুন, তেল, এবং ভিনেগার দিয়ে একটি সস তৈরি করুন এবং এটি রুটি বা সবজির সাথে খান।
সতর্কতা:
গর্ভবতী বা স্তন্যদানকারী মহিলাদের কাঁচা রসুন খাওয়ার আগে ডাক্তারের সাথে পরামর্শ করা উচিত।
কিছু লোকের কাঁচা রসুন খাওয়ার পরে পেট খারাপ বা গ্যাস হতে পারে।
৯. ত্বক ভালো রাখে, ব্রণের উপকার করে:
প্রতিদিন দুই কোয়া রসুন খালি পেটে খেলে ত্বক ভালো থাকে, ত্বকে বার্ধক্যের ছাপ পড়ে না, চেহারায় কোনো দাগ থাকলে কমে যায়।ব্রণ দ্রুত শুকিয়ে যায়।দাগ দূর করে।
আরো পড়ুন: আঙুর ফল খাওয়ার উপকারিতা
১০. ফুসফুসের সংক্রমণ প্রতিরোধ:
ফুসফুসে বিভিন্ন কারণে সংক্রমণ হতে পারে। অ্যালার্জি সমস্যা, ঠান্ডা লাগার প্রবণতা থেকে ফুসফুসে সংক্রমণ ঘটতে পারে, যা থেকে মুক্তি পেতে রসুন পিষে রস খেলে সংক্রমণের ঊর্ধ্বগতি রোধ করে।
১১. কোষের ক্ষতিরোধ করে:
রসুনে উপস্থিত অ্যান্টি–অক্সিডেন্ট ‘সেল ড্যামেজ’ ও ‘এজিং’ রোধ করে। ব্রেনের কোষের ড্যামেজ কম হয়ে আলঝেইমারস ও ডিমেনশিয়ার মতো রোগের হাত থেকে রক্ষা পাওয়া যায়।
১২. হাড়ের শক্তি বাড়ায়:
একটা বয়সের পর বিভিন্ন কারণে নারীদের হাড়ের শক্তি কমে যায়। প্রতিদিন ২ গ্রাম করে রসুন খেলে নারীদের শরীরে ইস্ট্রোজেনের মাত্রায় ভারসাম্য থাকে, ফলে হাড় সংক্রান্ত সমস্যা অনেকটা কমে যায়।
আরও গবেষণার প্রয়োজন:
কাঁচা রসুন এবং মস্তিষ্কের কার্যকারিতার মধ্যে সম্পর্ক সম্পর্কে আরও গবেষণার প্রয়োজন।
অন্যান্য:
চুলের বৃদ্ধি: কাঁচা রসুন চুলের বৃদ্ধিতে সাহায্য করে।
ত্বকের যত্ন: রসুন ত্বকের সংক্রমণ দূর করতে সাহায্য করে।
পোকামাকড় প্রতিরোধ: রসুনের তীব্র গন্ধ পোকামাকড় দূর করতে সাহায্য করে।
কাঁচা রসুন খাওয়ার সর্বোত্তম উপায়:
সকালে খালি পেটে ১-২ কোয়া কাঁচা রসুন চিবিয়ে খাওয়া যেতে পারে।
রসুনের কোয়া মধুর সাথে মিশিয়ে খাওয়া যেতে পারে।
রসুনের কোয়া ভেঙে দই বা স্যালাদের সাথে মিশিয়ে খাওয়া যেতে পারে।
সতর্কতা:
অতিরিক্ত কাঁচা রসুন খাওয়ার ফলে পেট খারাপ, বমি বমি ভাব এবং মাথাব্যথা হতে পারে।
গর্ভবতী ও স্তন্যদানকারী মায়েদের রসুন খাওয়ার আগে চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া উচিত।
যাদের রক্তপাতের সমস্যা আছে তাদের রসুন খাওয়া উচিত নয়।
পরিশেষে:
কাঁচা রসুন রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধিতে একটি কার্যকর খাবার। নিয়মিত কাঁচা রসুন খাওয়ার ফলে বিভিন্ন রোগ থেকে সুরক্ষা পাওয়া যায়। রসুন একটি ঔষধি নয়, তবে এটি বিভিন্ন স্বাস্থ্য সমস্যার উপকারী হতে পারে। কাঁচা রসুন হৃৎপিণ্ডের সুরক্ষায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। নিয়মিত কাঁচা রসুন খাওয়া হৃদরোগের ঝুঁকি কমাতে সাহায্য করতে পারে। কাঁচা রসুন রক্তে শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করতে পারে।
নিয়মিত রসুন খাওয়া স্বাস্থ্যের জন্য উপকারী হতে পারে। ক্যান্সার প্রতিরোধে রসুন কতটা কার্যকর তা সম্পর্কে আরও গবেষণার প্রয়োজন। তবে অতিরিক্ত খাওয়া থেকে সাবধান থাকা উচিত। কাঁচা রসুনের পাশাপাশি, স্বাস্থ্যকর খাবার খাওয়া এবং নিয়মিত ব্যায়াম করাও জীবাণুনাশক হিসেবে রসুন কাজ করে। নিয়মিত রসুন খাওয়ার আগে ডাক্তারের সাথে পরামর্শ করা উচিত।